ডাকটিকেট প্রচলনের ইতিহাস

ডাকটিকেট প্রচলনের ইতিহাস

ডাকটিকিট হল খামের উপর আঠা দিয়ে লাগানো ছোট এক টুকরো রঙিন কাগজ, যার মাধ্যমে ডাক মাসুল পরিশোধ করা হয়। বিশ্বে প্রথম ডাকটিকিটের ব্যবহার শুরু হয় ১ মে ১৮৪০ সালে।
ডাকটিকিটের আবিষ্কার বিশ্বের ডাক ব্যবস্থায় এনেছে গতিশীলতা। পূর্বে ডাক সরবরাহের জন্য ডাকটিকিট ব্যবহার করা হত না। তখন চিঠির দূরত্ব এবং চিঠির পাতার সংখ্যা গণনা করে ডাক মাশুল নির্ণয় করা হত। এই পদ্ধতিটি ছিল অত্যন্ত ঝামেলাপূর্ণ। অনেকেই উচ্চ ডাক মাশুলের জন্য প্রাপ্ত চিঠি গ্রহণ করতে চাইতেন না। এর ফলে ডাক বিভাগের ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছিল। এছাড়াও ডাক বিভাগের সাথে সাধারণ মানুষের নিয়মিত ঝগড়া লেগেই থাকত।
এই সমস্যার কথা অনুধাবন করে তখনকার ইংল্যান্ডের ছোট শহর ওয়েস্টারসায়ারের বাসিন্দা রোল্যান্ড হিল ডাক বিভাগের একটি পরিবর্তন আনতে চাইলেন। তিনি জনগণের চাহিদার কথা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উপস্থাপন করলেন। রোল্যান্ড হিলের আবেদনের যথার্থতা যাচাই করে ১৮৩৯ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলেন।
কিন্তু এর পরেই যেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিল সেটা হল ডাকটিকিটের নকশা। বিশ্বের প্রথম ডাকটিকিটের জন্য সারা দেশ থেকে নকশা আহ্বান করা হল সাথে পুরষ্কার হিসেবে ঘোষণা করা হল একশ পাউন্ড। কিছুদিনের মধ্যে ব্রিটিশ ডাক বিভাগের কাছে প্রায় ২৫০০টি নকশা জমা পড়ে। কিন্তু সেগুলোর একটিও তাদের মনের মত না হওয়ায় চিন্তার পরিধি ক্রমশ বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত ডাকটিকিটের নকশার দায়িত্ব গিয়ে পরে রোল্যান্ড হিলের উপর। তিনি ভাবতে শুরু করলেন কিভাবে ডাকটিকিটের জন্য একটি উপযুক্ত নকশা তৈরি করা যায়। তিনি তাঁর নকশার আইডিয়া পেয়ে যান সে সময়ের একটি মেডেল দেখে যার উপর রানী ভিক্টোরিয়ার ছবি খোদাই করা ছিল। তিনি তাঁর ডাকটিকিটে রানীর এই ছবিটি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
১৮৩৮ সালে রোল্যান্ড হিলের পরামর্শ নিয়ে চার্লস ও ফ্রেডরিক নকশার কাজ শুরু করেন। তারা যে নকশাটি তৈরি করেন তাঁর মাঝখানে ছিল রানী ভিক্টোরিয়ার মাথার ছবি। নকশার উপরে লেখা ছিল POSTAGE এবং নিচে লেখা ছিল ONE PENNY এছাড়াও ডাকটিকিটের উপরের দুই কোনায় দুটি স্টার এবং নিচের দুই কোনায় প্লেটের নম্বর অনুযায়ী বিভিন্ন ইংরেজি অক্ষর লেখা ছিল। ডাকটিকিট ছাপানোর দায়িত্ব পায় তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত মুদ্রাকর মেসার্স পারকিন্স।
১৮৪০ সালের ১১ এপ্রিল বিশ্বের প্রথম ডাকটিকিট ছাপানোর কাজ শুরু হয়। সে সময় এক পেনি ও দুই পেন্স মূল্যের দুটি ডাকটিকিট ছাপানো হয়। এক পেনি মূল্যের ডাকটিকিট ছাপানো হয় কাল রংয়ে। তাই এটি পরিচিতি পায় পেনি ব্ল্যাক নামে। আর দুই পেন্স মূল্যের ডাকটিকিট ছাপানো হয় নীল রংয়ে এবং এটি পেনি ব্লু নামে পরিচিতি পায়।
পেনি ব্ল্যাক হল বিশ্বের প্রথম ডাকটিকিট। বিশ্বের অন্য কোথাও ডাকটিকিটের প্রচলন ছিলনা বিধায় ডাকটিকিটে কোন দেশের নাম দেয়ার প্রয়োজন ছিলনা। এই বিষয়টার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এখনো ইংল্যান্ডের ডাকটিকিটে দেশের নাম ব্যবহার করা হয় না। তাঁর পরিবর্তে ডাকটিকিটের এক কোনায় রানীর প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ডাকটিকেট প্রচলনের ইতিহাস ডাকটিকেট প্রচলনের ইতিহাস Reviewed by Shaj Utshob on 11:02 PM Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.